বাগানটা হোক বারান্দায়!

বারান্দাভরা গাছ থাকবে, আর সাথে একচিলতে আকাশ- স্বপ্নটা কি খুব বেশি? উঁহু, একদম না। কিন্তু কীভাবে হবে এতোসব? খরচটা সাধ্যের মধ্যে থাকবে তো? এমন নানারকম প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গিয়ে শুরুতেই ভয় পেয়ে যান অনেকে। আপনার সেই ভয় কাটিয়ে স্বপ্নটাকে সত্যি করতেই আজকের এই আয়োজন!

বারান্দা কি শুধুই গাছের হবে?

বারান্দাকে আপনি সাজিয়ে তুলতে পারেন আপনার মনের মতো করে। টবে গাছ লাগাতে পারেন। মাটির টব, পিতল, তামা বা পছন্দমতো যেকোন টব হতে পারে সেতা। গ্রিলের সাথে পাটের ষিকায় ঝুলন্ত টব রেখে তাতে লাগিয়ে দিতে পারেন নানারকম গাছ। টবগুলো সাধারণত লাল রঙয়ের হয়। তবে টবগুলোকে ইচ্ছে হলে বার্জারের ভিন্ন ভিন্ন রঙয়ের মধ্য থেকে পছন্দসই রঙ বেছে নিয়ে রাঙিয়ে দিতে পারেন। লতানো গাছ লাগিয়ে যদি সেই লতা গ্রিলে উঠিয়ে দেন, তাহলে সেটা লতিয়ে ছড়িয়ে যাবে পুরো বারান্দা। খুব দ্রুত বড় হয় এই লতানো গাছগুলো। তাই, কম সময়েই সবুজে ভরে যাবে আপনার গাছ। যদি বড় কাছ, এই যেমন- কাঠগোলাপের শখ থাকে, তাহলে বারান্দার উচ্চতার উপরে নির্ভর করে বড় একটি টবে এমন কাঠগোলাপ, আম বা পেয়ারার গাছও লাগিয়ে নিতে পারেন। মরিচ বা টমেটো গাছ খুব বেশি জায়গা নেয় না। বড় গাছের টবে লাগিয়ে নিতে পারেন এই ছোট্ট ফলদ গাছ। বারান্দাটা এতে করে হয়ে উঠবে আরও রঙিন। পুদিনা গাছও আজকাল বারান্দার বাগানে বেশ জনপ্রিয়তা কুড়িয়েছে। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, এই নানারকম গাছের পাশাপাশি আর কী রাখা যায় বারান্দায়? পাথর

বারান্দার একটা কোনে পাথর আর মাটি জমিয়ে সেখানে কিছু গাছের বীজ ফেলে দিতে পারেন। এই পাথরগুলোকেও ইচ্ছে হলে নানান রঙ-এ রাঙিয়ে দিতে পারেন।

আসবাব

ছোট্ট দুটো চেয়ার, কিংবা একটা টেবিল রাখতে পারেন বারান্দায়। টেবিল আর চেয়ারের নিচে লতানো গাছ তুলে দিতে পারেন। বসার ব্যবস্থাকে আরেকটু আরামদায়ক করে তুলতে কয়েকটি কুশনও রাখতে পারেন বারান্দায়। চেয়ার না রাখতে চাইতে পড়ন্ত বিকেলে এক কাপ গরম চায়ে চুমুক দেওয়ার জন্য ঝুলন্ত দোলনাও রাখতে পারেন।

আলো

দিনের বেলায় নাহয় বারান্দা আলোকিত থাকবে। কিন্তু রাতের বেলা? রাতের জন্য বারান্দায় হালকা আলো লাগিয়ে নিন। নানান রঙয়ের আলো পাওয়া যায় বাজারে। গাছ আর আলো মিলে মায়াময় একটা পরিবেশ তৈরি হবে সহজেই।

বাড়তি কিছু

ইচ্ছে করলে কিছু মাটির পছন্দসই পাত্রে মোম, কৃত্রিম ফুল ইত্যাদি রেখে দিতে পারেন। সাথে যোগ করতে পারেন পানি। আপনার বারান্দার সৌন্দর্য অনেকটা বেড়ে যাবে এতে।

খরচটা কেমন?

বারান্দা কীভাবে সাজাবেন তা নাহয় জানা গেল। কিন্তু খরচটা কেমন হবে? জেনে নিন!

টবের দরদাম

ঘরেই দুধ ও অন্যান্য জিনিসের কৌটা দিয়ে টব বানাতে পারেন আপনি। তাছাড়া, বাজারে নানারকম টব পাবেন আপনি। নার্সারিতে এমন টব সবসময় বিক্রি হয়। মাটির টব, পিতলের টব, প্লাস্টিকের টব, তামার টব- টব আছে হরেকরকম। টবের উপাদানভেদে এর দামটাও কম-বেশি হবে। প্লাস্টিকের ছোট টবগুলো ২০-৫০ টাকায় পাবেন আপনি। এগুলোর মধ্যে চাইলে ঝুলন্ত টবও বেছে নিতে পারেন। এছাড়া অন্যান্য টবগুলোও (ছোট, বড় ও মাঝারী) সাধারণত ১২০ থেকে ৭০০ টাকার মধ্যে পাবেন আপনি।

গাছের দাম

গাছের প্রজাতিভেদে এর দাম ভিন্ন ভিন্ন হয়ে থাকে। সাধারণত, গাছগুলোর দাম ২০-১০০ টাকা হয়ে থাকে। লতাজাতীয় গাছের দাম ২০ থেকে ১৫০ টাকার মধ্যে হয়ে থাকে। কোন বড় গাছের কলম নিতে গেলে আপনাকে ২০০-৫০০ টাকা খরচ করতে হতে পারে।

আর রঙয়ের জন্য কমদামে মানসম্পন্ন রঙ পেতে পারেন আপনি বার্জারেই!

কোথায় পাবেন?

গাছ, গাছের টব এবং অন্যান্য সরঞ্জাম আপনি হাতের কাছের যেকোন নার্সারিতেই পাবেন। তবে ভালোমানের গাছ এবং টব বেছে নিতে চলে যান ঢাকা কলেজ, কার্জন হল ইত্যাদি স্থানে। কলাবাগান, ধানমন্ডি, বকশি বাজার, আবাহনী মাঠের উলটো পাশ ইত্যাদি স্থানেও হরেকরকম গাছ এবং টবের পশরা পাবেন আপনি। নুড়ি পাথর খুঁজলে বাড়ির আশপাশ থেকেই বেছে নিতে পারবেন আপনি। এজন্য আলাদা কোন খরচের দরকার পড়বে না।

মনে রাখবেন

১। গাছের টবের নিচে যেন পানি এবং বাতাস চলাচলের জন্য ছিদ্র থাকে। এতে করে পানি জমে সেখান থেকে মশা এবং অন্যান্য পোকামাকড়ের জন্ম হবে না।

২। কিছু গাছ মাটি এবং পানিতে বাঁচে। কিছু গাছ শুধু পানিতে বা মাটিতে বাঁচে। কোন গাছটি বেছে নিচ্ছেন এবং সেটার জন্য কেমন পরিবেশ ভালো সেটা নিশ্চিত হয়ে নিন।

৩। আপনার বারান্দায় যথেষ্ট আলো আছে কিনা তা নিশ্চিত করুন।

৪। কিছুদিন পরপর টবের স্থান বদলে দিন। এতে করে গাছের স্বাস্থ্য ভালো থাকবে।

একটু হয়তো খরচ হবে, কিছুটা সময়ও লাগবে। তবে বারান্দায় বাগান করতে চাইলে এটুকু করার জন্য নিজেকে মানসিকভাবে প্রস্তুত করুন। গাছের সবচাইতে বেশি দরকার পড়ে যত্নের। তাই, নিয়মিত বারান্দার গাছগুলোর যত্ন নিন। কয়েকমাস পর ফলাফল দেখে চমকে যাবেন আপনি!

কোন দেয়ালে মানাবে কেমন পর্দা?

ঘরের সৌন্দর্য রক্ষা কিংবা গোপনীয়তা, পর্দা ছাড়া ঘর সাজানো যেন অপূর্ণই রয়ে যায়। আর সেই পর্দা যদি হয় ঘরের দেয়ালের সাথে মানানসই, তবে তো কথাই নেই! আপনার সাজানো-গোছানো স্বপ্নের সেই ঘরটি যেন আরও আপন হয়ে ওঠে প্রতিনিয়তই। যেখানে আপনি কাটাতে পারেন শান্তির কিছু মুহূর্ত একদম নিজের মতো করে; নিশ্চিন্তে, নিরালায়।

তো বাজারের হরেক রঙের পর্দার ভিড়ে, কোনটা যে আপনার ঘরের দেয়ালে মানাবে, আর কোনটা দেখাবে বেমানান, এই নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন? বিষয়টা কিছুটা জটিল মনে হলেও, অতটা জটিল কিন্তু নয়! শুধু একটু হিসাব মিলিয়ে নিলেই কিন্তু দেয়ালে পর্দা সাজবে একদম মনের মতো করে!

প্রথমে শুরু করছি বসার ঘর বা ড্রয়িং রুমের দেয়ালটি দিয়ে, ছিমছাম এই ঘরটির দেয়াল সাজানো চাই এমন পর্দা দিয়ে যা আপনার ঘরকে রাখবে আলোকিত এবং উজ্জ্বল। ঘরের আসবাবপত্রের ভিড়ে রুমটি যেন অন্ধকার না দেখায়, সেজন্য হালকা রঙের পাতলা পর্দাই হবে এই রুমের দেয়ালের জন্য মানানসই। এক্ষেত্রে সাদা কিংবা অফ-হোয়াইট রঙের সিনথেটিক কাপড়ের পর্দা বেছে নেওয়া যেতে পারে। তবে দেয়ালের সাথে পর্দার রঙ যেন হুবুহু মিলে না যায় সেই বিষয়টিও বিবেচনায় রাখা প্রয়োজন।   

এবার আসি খাবার ঘরের কথায়, এই ঘরের দেয়ালের জন্য উজ্জ্বল রঙের পর্দা বেছে নিতে পারেন। সাধারণত খাবার ঘরটি থাকে রান্নাঘরের পাশে, আর এই রুমে যদি রোদের তাপের আনাগোনা বেশি থাকে, তবে শান্তিমতো আহার করা সম্ভব হবে না। তাই দেয়ালের আকৃতি এবং রঙ বুঝে বাদামী, লালচে কমলা, মেরুন কিংবা চকোলেট রঙের প্রিন্টের পর্দাও কিন্তু খারাপ দেখাবে না ডাইনিং রুমের দেয়ালে।

বাসার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ রুমটি হলো শোবার ঘর। সারাদিনের ক্লান্তি যেন এক নিমিষেই চলে যায় শোবার ঘরে প্রবেশের সাথে সাথে। আর তাই শোবার ঘরের দেয়ালের জন্য চাই কিছুটা ভারী, তবে সুতি কাপড়ের পর্দা। ঘরে একদিকে যেমন বাতাস ঢোকা চাই, তেমনি গোপনীয়তা রক্ষাও পাবে সমান গুরুত্ব। তাই পর্দা বাছাইয়ে হালকা গোলাপি, সবুজ, আকাশী কিংবা পিচ রঙ হতে পারে পর্দার জন্য পারফেক্ট।

এক্ষেত্রে দুই স্তরের পর্দাও ব্যবহার করতে পারেন। সামনে কিছুটা মোটা ধরনের কাপড়ের পর্দা ঝুলিয়ে তার পিছনে ভিন্ন রঙের নেটের পর্দা টাঙিয়ে দিলে ঘরটি দেখতে আরও সুন্দর দেখাবে। সাধারণত নেটের পর্দা সাদা রঙের হলেই তা দেখতে সুন্দর দেখায়। তবে অফ হোয়াইট, বাসার সবচেয়ে ছিমছাম এই রুমটিতে যেন শান্তি এনে দিয়ে নেটের এই পর্দা। একদিকে যেমন রুমের গোপনীয়তা বজায় রাখবে, অন্যদিকে রুমে আলো-বাতাসের সুব্যবস্থাও করে দিবে।

চাইলে নেটের পর্দাটি দুই পাশে বেল্ট দিয়ে হালকা করে বেঁধেও রাখতে পারবেন, এতে করে রুমে কিছুটা ভিন্নতাও আসবে, সাথে বাতাসের প্রবেশ তো থাকছেই। 

অন্যদিকে, বাচ্চাদের ঘরের দেয়ালের জন্য পর্দা হওয়া চাই উজ্জ্বল রঙের। কার্টুন প্রিন্টেড পর্দা দেখে বাচ্চারা যেমন খুশি হয়ে যাবে, তেমনি শৈশবের এই সময়টাও হয়ে উঠবে আরও প্রাণবন্ত।

তবে দেয়ালের জন্য পর্দা বাছাইয়ের ক্ষেত্রে আরও যে বিষয়টি খেয়াল রাখতে হবে, তা হলো ঘরের রঙ এবং আকৃতি। দেয়ালের রঙ এবং পর্দা যেন কখনোই একই রঙের না হয় এই বিষয়টি বিশেষ নজরে রাখতে হবে। ঘরের আকৃতি যদি ছোট হয় এবং আসবাবপত্রের সংখ্যাও যদি বেশি হয়ে থাকে, তবে গাঢ় রঙের প্রিন্টের পর্দা বেছে না নিয়ে, হালকা এক রঙের পর্দা বেছে নিতে পারেন।

কোথায় পাবেন পর্দা?   

ঢাকার মধ্যে নিউমার্কেট, এলিফ্যান্ট রোড, মোহাম্মদপুর, রোকেয়া সরণি, গুলশান, মিরপুর ছাড়াও বিভিন্ন জায়গায় পাওয়া যাবে পর্দার বিশাল সংগ্রহ। আপনি চাইলে পছন্দমতো কাপড় কিনে লেইস, বোতাম দিয়ে ডিজাইন করে বানিয়ে নিতে পারেন রুমের জন্য মানানসই পর্দা। এক্ষেত্রে পর্দার সঠিক মাপ জেনে নেওয়া জরুরি।

কাপড়ভেদে পর্দা প্রতি পিস ৮০০-৯০০ থেকে শুরু করে ২,৫০০ টাকা পর্যন্ত হতে পারে। আর গজ হিসেবে কিনতে চাইলে গজ প্রতি ৪০০-৪৫০ থেকে ১ হাজার ২০০-৫০০ টাকা পর্যন্ত পড়তে পারে।

অন্যদিকে টারসেলের দাম পড়বে ৩০০ থেকে ১ হাজার টাকা এবং টারসেল স্ট্যান্ডের দাম পড়বে ৫০০ থেকে ২ হাজার টাকা। সুতি অথবা খাদি কাপড়ের এসব পর্দায় ব্লক, বাটিক অথবা হাতের কাজ করা থাকে। প্রতিটির দাম পড়বে ১ হাজার থেকে ২ হাজার ৫০০ টাকা।

হোম টেক্স প্রতিটি পর্দার দাম পড়বে ৬৫০-৪৯০০ টাকার মধ্যে। অন্যদিকে কে ক্রাফট, অঞ্জন’স কিংবা আড়ং-এ প্রতিটি পর্দার দাম পড়বে ৭০০-১৬০০ টাকার মধ্যে, যদিও ডিজাইন এবং কাপড় ভেদে এই দামের তারতম্য দেখা দিতে পারে।  

তবে আপনি যদি একটু কম খরচের মধ্যে কাপড় কিনে নিজেই পছন্দমতো ডিজাইন অনুযায়ী পর্দা বানিয়ে নিতে চান, তবে এর জন্য পারফেক্ট জায়গা হবে নিউমার্কেট। এখানে আপনি অনেক ধরনের গজ কাপড়ের সন্ধান পাবেন। সুতি চেক কিংবা শেডের কাপড় থেকে শুরু করে সিনথেটিক, নেট এমনকি বিভিন্ন প্রিন্টের কাপড়ের দেখা মিলবে নিউমার্কেটে। যার দাম ৩০০ টাকা থেকে শুরু করে ২৫০০ বা তার বেশিও হতে পারে। এক্ষেত্রে কিছুটা দরদাম করেই কাপড় কিনতে হবে। ভালো হয় যদি আগেভাগেই আপনি জেনে নিতে পারেন যেকোনো কাপড়ের দাম কেমন হতে পারে, তবে যাচাই-বাছাই করে কাপড় কিনতে সুবিধা হবে। 

Search products
Back to Top
Product has been added to your cart
Compare (0)